বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তার পরিচিতি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - NCTB BOOK

এই অধ্যায় পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীৱা বৰ্তমান বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রধান ভূমিকা পালনকারী বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। তাছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান ও বিশেষ কার্যাবলি, উদ্দেশ্য, সমাজ গঠনে তার ভূমিকা, আমদানি-রপ্তানিতে তার সহায়তা, অর্ণ হাসার, কৃষি ও উন্নয়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যাবে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের তহবিলের উৎস, তহবিল  বিনিয়োগ এবং তার আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্র সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা ধারণা লাভ করতে পারবে।

এই অন্যার পাঠ শেষে আমরা -

  • বাণিজ্যিক ব্যাংকের ধারণা ও পরিচিত্তি ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য মূল্যায়ন করতে পারব।
  • বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি বিশ্লেষণ করতে পারব। 
  • বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর ও ব্যরের খাত সমূহ চিহ্নিত করতে পারব।
Content added || updated By

সাধারণভাবে ব্যাংক বলতে আমরা বাণিজ্যিক ব্যাংককেই বুঝি। যুগের সাথে সাথে বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থায় অনেক আধুনিকায়ন ও বিশেষায়ণ ঘটেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণত জনগণের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সঞ্চিত অর্থ সংগ্রহ করে ঋণ গ্রাহকদের ধার দিয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক একটি মুনাফাভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা অর্থের লেনদেন ও আদান-প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে থাকে।

মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে যে প্রতিষ্ঠান অর্থ ও অর্থের মূল্যে পরিমাণযোগ্য বা সেবা লেনদেন করে থাকে, এ রকম প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলা হয়।

পরিশেষে বলা যায়, যে প্রতিষ্ঠান অর্থ ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে ব্যবসায় করে তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে অভিহিত করা হয়। তবে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বহুদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণ তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

Content added || updated By

বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য

বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণত মুনাফা অর্জনের জন্য গঠিত হলেও তার আরও অন্যান্য উদ্দেশ্য আছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্যগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো:

১) মুনাফা অর্জন : মুনাফা অর্জনের মৌলিক উদ্দেশ্যেই বাণিজ্যিক ব্যাংক গঠিত হয় ।

২) মূলধন গঠন : জনগণের অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় হিসেবে গ্রহণ করে বিনিয়োগের জন্য পুঁজি বা মূলধন গঠন (Capital formation) তার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।

৩) বিনিময়ের মাধ্যম : বাণিজ্যিক ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চেক, হুন্ডি, বিনিময় বিলের প্রচলন করে থাকে।

৪) জনকল্যাণ : মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি জনকল্যাণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি পরোক্ষ উদ্দেশ্য।

৫) ঋণ নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণনীতি ও ঋণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রদান করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।

৬) পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা: সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সাহায্য করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের আরেকটি উদ্দেশ্য।

৭) সম্পদের সুষম বণ্টন : অর্থ-সম্পদের মাধ্যমে অর্থনীতির সকল খাতকে সমানতালে উন্নত করে সামগ্রিকভাবে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।

৮) কর্মসংস্থান সৃষ্টি : অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।

৯) ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাসকরণ : বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানত গ্রহণ ও ঋণদান কার্যক্রম সকল শ্রেণির জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে, যা সমাজের ধনী-দরিদ্রের দূরত্ব হ্রাস করে থাকে।

১০) সঞ্চয় প্রবণতা সৃষ্টি : জনগণের মাঝে সঞ্চয়ের প্রবণতা সৃষ্টি করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।

১১) নিরাপত্তা : মানুষের অর্থ, মূল্যবান গহনা ইত্যাদির নিরাপত্তা প্রদান বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।

১২) অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা : ঋণ সরবরাহের মাধ্যমে বাজারে অর্থের চাহিদা পূরণ করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য।

১৩) শিল্প ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন : আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাপক সহযোগিতা প্রদান করে বাণিজ্য ও শিল্পের উন্নয়ন নিশ্চিত করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিশেষ লক্ষ্য।

১৪) জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করাও বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য ।

Content added || updated By

বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি

আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যাংক দেশের শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন রকম সেবা প্রদান করে থাকে। ব্যাংকের সেবাকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি

  1. প্রধান কার্যাবলি
  2. বিশেষ ও অন্যান্য কার্যাবলি।

ক) প্রধান কার্যাবলি

১) আমানত গ্রহণ ও সুদ প্রদান : আমানতকারীর নিকট হতে তাঁদের সঞ্চয় বিভিন্ন প্রকার চলতি, সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানত হিসাবে গ্রহণ করা ব্যাংকের একটি প্রধান কাজ। সঞ্চয়ী ও স্থায়ী হিসাবের আমানতকারীদের জমার অর্থের ওপর ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করে থাকে। চলতি হিসাবে সুদ প্রদান করা না হলেও সেখানে অন্য কিছু সুবিধা দেওয়া হয়।

২) মূলধন গঠন : জনগণের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সঞ্চয়গুলো বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে একত্রিত করে ব্যাংক মূলধন গঠন করে থাকে।

৩) ঋণ মঞ্জুর ও সুদ গ্রহণ : ব্যাংক জনগণের নিকট হতে সঞ্চিত অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে, সেই অর্থ ঋণগ্রহীতাদের বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ হিসাবে প্রদান করে। ঋণ প্রদান করা ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ ঋণগ্রহীতাদের ঋণ দিয়ে ব্যাংক একদিকে যেমন উৎপাদনমুখী কাজে সহায়তা করে, অন্যদিকে সেই ঋণের উপর যে সুদ আদায় করে তা ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস। ব্যাংক আমানতকারীদের যে হারে সুদ প্রদান করে ঋণগ্রহীতাদের নিকট থেকে তার অধিকতর হারে সুদ আদায় করে। এটি নিট / প্রকৃত সুদ যা ব্যাংকের কার্য পরিচালনাগত আয়ের একটি অংশ।

৪) ঋণ আমানত সৃষ্টি : ঋণ গ্রহণের সময় ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের সাথে একটি হিসাব খুলতে হয়। ঋণের অর্থ সেই হিসাবে জমা বা ক্রেডিট করা হয়। এরপর ঋণগ্রহীতা যত পরিমাণ টাকা সেই হিসাব থেকে উত্তোলন করে, সেটা ওই হিসাবে ডেবিট করা হয়। এভাবে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে আমানতের সৃষ্টি করে।

৫) বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি : আর্থিক লেনদেন ও দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির মাধ্যম হিসেবে ব্যাংক চেক বিনিময় বিল, প্রত্যয় পত্র, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদির ব্যবহার করে থাকে।

৬) নোট ইস্যু : সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংক সরাসরি মুদ্রা প্রচলন করে না, এটা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংক পরোক্ষভাবে মুদ্রা প্রচলনে সহায়তা করে। যেমন ধরা যাক তোমার সোনালী ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাবে ১ লক্ষ টাকা জমা আছে। এমতাবস্থায় তুমি যদি ৬০ হাজার টাকার কম্পিউটার ক্রয় কর তবে তোমার একাউন্টের চেকে তুমি টাকা পরিশোধ করতে পার । এভাবে ব্যাংক চেক কখনো কখনো বিনিময়ের মাধ্যমে হিসাবে এবং মুদ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করে সরকারের মুদ্রা প্রচলনের কাজটি সহজ করে দেয়

৮) অছি হিসেবে কাজ : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের মক্কেলদের সম্পত্তির অছি (Trustee) এবং সংস্থার আর্থিক সচ্ছলতার সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে।

৯) আমদানি-রপ্তানি সাহায্য : আমদানিকারক দেশি মুদ্রা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ও রপ্তানিকারকদের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে দেশি মুদ্রায় রূপান্তর করা প্রয়োজন, যা ব্যাংকগুলোর অন্যতম কাজ। আবার প্রত্যয় পত্র বা Letter of Credit (LC) -এর মাধ্যমে ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানিকারককে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে অগ্রিম অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করে। প্রত্যয় পত্র এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে আমদানি ও রপ্তানিকারকের মধ্যে আর্থিক এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে তাদের মনোনীত ব্যাংক দুই পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যাদি সম্পাদন ও উপদেশ প্রদান করা ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিমূলক কার্য ।

১০) সরকারের কোষাগার হিসেবে কাজ করে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো নির্বাচিত ব্যাংক সরকারের কোষাগার হিসেবেও কাজ করে থাকে।

১১) বিনিময় বিল ভাঙানো : ব্যাংক মক্কেলের পক্ষে বাট্টার মাধ্যমে বিনিময় বিল ভাঙিয়ে ব্যবসায় বাণিজ্যে সহায়তা করে থাকে।

খ) বিশেষ ও অন্যান্য কার্যাবলি

১) মূলধন বিনিয়োগ : ব্যাংক ঋণ প্রদানের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে মূলধন বিনিয়োগ করে, যা একটি দেশের মোট উৎপাদন ও মূলধন গতিশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

২) অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা : ব্যাংক একটি দেশের সার্বিক অর্থনীতি তথা শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, গৃহনির্মাণ, শিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতি তথা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৩) অর্থ স্থানান্তর : ব্যাংক তার বিনিময় মাধ্যমের সাহায্যে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে অর্থ স্থানান্তর করে থাকে।

৪) অর্থের নিরাপত্তা প্রদান : ব্যাংক জনগণের অর্থ জমা রাখার মাধ্যমে অর্থের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া গ্রাহক তার মূল্যবান সম্পদের দলিলপত্র, অলংকারাদি লকার সেবার মাধ্যমে ব্যাংকের কাছে জমা রাখে।

৫) পরামর্শ দান : মক্কেলদের অনুরোধে বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়িক পরামর্শ দেওয়া ও তাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনা করা যেমন: বাড়িভাড়া আদায় করাও ব্যাংকের কাজ।

৬) কর্মসংস্থান : ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি দেশের কর্মসংস্থানের সহায়তা করে থাকে এবং দেশের অর্থনীতিতে ঋণ সরবরাহের কারণে পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের যোগান দিয়ে থাকে।

৭) ঋণ নিয়ন্ত্রণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাণিজ্যক ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত ঋণের সংকোচন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থ ও ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য একান্ত জরুরি।

৮) কৃষি উন্নয়ন : কৃষিক্ষেত্রে ঋণ ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংক কৃষি উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে।

৯) শিল্পোন্নয়ন : ব্যাংক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে শিল্পোন্নয়নের সাহায্য করে থাকে।

১০) আঞ্চলিক উন্নয়ন : ব্যাংকের শাখা বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত থাকায় একটি দেশের আঞ্চলিক উন্নয়নেও ভূমিকা রেখে থাকে।

Content added || updated By

বাণিজ্যিক ব্যাংকের তহবিলের উৎস

বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণত নিম্নলিখিত উৎস থেকে তার তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। এর কিছু বহিস্থ উৎস আর কিছু অভ্যন্তরীণ উৎস ।

১) পরিশোধিত মূলধন : ব্যাংকের প্রাথমিক ও প্রধান উৎস হচ্ছে পরিশোধিত মূলধন। অংশীদারি কারবারি প্রতিষ্ঠান হলে মালিকগণ নিজেরা মূলধন সরবরাহ করে এবং যৌথ মূলধনি প্রতিষ্ঠান হলে শেয়ার ইস্যু করে মূলধন গঠন করা হয়।

২) সংরক্ষিত তহবিল : প্রতিবছর মুনাফার একটি অংশ শেয়ারহোল্ডার বা মালিকগণের মধ্যে বণ্টন না করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখা হয় তাকে সংরক্ষিত তহবিল বলে। এই অর্থ ভবিষ্যতে মূলধন হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।

৩) আমানত : বাণিজ্যিক ব্যাংকের তহবিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহ্যিক উৎস হচ্ছে আমানত। ব্যাংক বিভিন্ন মেয়াদে (যথা চলতি, সঞ্চয়ী, স্থায়ী) আমানত গ্রহণ করে থাকে, যা আমানতকারীরা একত্রে তুলে নেয় না। ফলে ব্যাংক এ অর্থ ঋণ অথবা বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবসায়ে খাটিয়ে মুনাফা অর্জন করে থাকে ।

৪) ধার গ্রহণ : বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো হতে ঋণ নিতে পারে। আবার সিকিউরিটি বা ঋণপত্র বিক্রয় করেও মুদ্রা বাজার হতে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে ।

Content added || updated By

বাণিজ্যিক ব্যাংকের আয়ের উৎসসমূহ

বাণিজ্যিক ব্যাংক তার ব্যবসা হতে বিভিন্নভাবে আয় করে থাকে, যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

১) ঋণের সুদ : বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তাদের ঋণ দেয় এবং এই ঋণের বিপরীতে সুদ গ্রহণ করে থাকে, যা তাদের আয়ের প্রধান উৎস।

২) বিনিয়োগ : বাণিজ্যিক ব্যাংক শেয়ার, ঋণপত্র, সরকারি সিকিউরিটি ইত্যাদি লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করেও মুনাফা অর্জন করে থাকে।

৩) বিল বাট্টাকরণ : মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবসায়ীদের প্রাপ্য বিনিময় বিল বাট্টা করেও অর্থ উপার্জন করে থাকে।

৪) ব্যাংক ড্রাফট, ট্রাভেলারস চেক থেকে প্রাপ্ত কমিশন : ব্যাংক ড্রাফট, ট্রাভেলারস চেক থেকে কমিশন হিসেবে প্রচুর আয় করে থাকে।

৫) যোগাযোগ : বাণিজ্যিক ব্যাংক মক্কেলের অনুরোধে বিভিন্ন যোগাযোগ (Correspondance সেবা প্রদান করে কমিশনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকে।

৬) লকার ভাড়া : জনগণ তাদের মূল্যবান দলিল, গহনা ইত্যাদি ব্যাংকের লকারে জমা রাখতে পারে। যার বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক সার্ভিস চার্জ আদায় করে থাকে।

৭) প্রতিনিধিত্ব : বাণিজ্যিক ব্যাংক মক্কেলের পক্ষে বিভিন্ন প্রকার প্রতিনিধিমূলক (Agency Service) লেনদেন করে থাকে। যেমন: চেক বা বিলের অর্থ আদায় বা পরিশোধ ইত্যাদি। এসব কাজের জন্য ব্যাংক কমিশন আদায় করে, যা তাদের আয়ের উৎস হিসাবে কাজ করে ।

৮) শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে মধ্যস্থতা : শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে ব্যাংক আয় করে থাকে ।

৯) বৈদেশিক বিনিময় : বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফা অর্জন করে থাকে।


১০) আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য : বৈদেশিক বাণিজ্যে ও লেনদেন নিষ্পত্তিতে ভূমিকা পালন করে কমিশন বা সার্ভিস চার্জ হিসেবেও বাণিজ্যিক ব্যাংক তার আয়ের একটি অংশ অর্জন করে থাকে।

১১) প্রত্যয়পত্র : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমদানিকারকদের প্রত্যয়পত্র (Letter of Credit) ইস্যু করে বাণিজ্যিক ব্যাংক কমিশন আদায় করে থাকে।

১৩) অছি : অছি (Trustee) হিসেবে কাজ করেও ব্যাংক কমিশন আদায় করে থাকে।

Content added || updated By

বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যয়ের খাতসমূহ

বাণিজ্যিক ব্যাংক তার ব্যবসা পরিচালনার জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত খাতগুলোতে ব্যয় করে থাকে।

১) আমানতকারীর আমানতের উপর সুদ প্রদান

২) কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত ধারের উপর সুদ প্রদান

৩) অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক হতে গৃহীত ঋণের উপর সুদ প্রদান।

৪) কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও বোনাস প্রদান

৫) পরিচালক ও ব্যবস্থাপকের ভাতা

৬) নিরীক্ষকের বিল

৭) অনাদায়ী ঋণের মামলা-মোকদ্দমার খরচ

৮) অফিস ঘরের ও গুদাম ঘরের ভাড়া

৯) শুল্ক ও কর

১০) বিমা প্রিমিয়াম

১১) যোগাযোগ খরচ যেমন: ডাক, তার, টেলিফোন, টেলেক্স, ফ্যাক্স, সুইফট ইত্যাদি

১২) বিজ্ঞাপন খরচ

১৩) কর্মীদের প্রশিক্ষণ খরচ

Content added || updated By

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

Please, contribute to add content into বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content
Please, contribute to add content into সৃজনশীল প্রশ্ন.
Content

আরও দেখুন...

Promotion